১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণকে সামরিক নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। বুধবার (২৩ নভেম্বর) সামরিক বাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্য্যম দ্য ডন।
বিদায়ী সেনাপ্রধান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “ আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান, যা পাকিস্তানের মানুষ সাধারণত এড়িয়ে যান। আর বিষয়টি হলো ১৯৭১ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) সেনাদের (পশ্চিম পাকিস্তানের) আত্মসমর্পণ।”
জেনারেল বাজওয়া বলেন, “আমি একটা তথ্য সংশোধন করে দিতে চাই। প্রথমত, পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) হাতছাড়া হওয়া সামরিক নয়, ছিল রাজনৈতিক ব্যর্থতা। লড়াইরত সেনার সংখ্যা ৯২ হাজার ছিল না, বরং এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪ হাজার। বাকিরা ছিলেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন।”
তিনি আরও বলেন, “এই ৩৪ হাজার সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর আড়াই লাখ সেনা এবং মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষিত ২ লাখ যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন এবং নজিরবিহীন ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে লড়াই করা সেনাদের এ ত্যাগ দেশে স্বীকৃতি পায়নি, যা ছিল মহা অন্যায়।”
অনুষ্ঠানে জেনারেল বাজওয়া গত সাত দশকে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টিকেকে “অসাংবিধানিক” বলেও মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে ভুল করা ও দাম্ভিক আচরণের জন্য রাজনীতিকদেরও সমালোচনা করেন।
পাকিস্তান সেনাপ্রধান বলেন, “রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ভুলের কারণে দেশ সমস্যার মধ্যে পড়েছে। এসব ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটা জরুরি।”
আগামী সপ্তাহে অবসরে যাচ্ছেন জেনারেল বাজওয়া। দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে সেনাপ্রধান হিসেবে সম্ভবত এটিই হতে পারে জনসমক্ষে তার শেষ বক্তৃতা প্রদান। পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান হচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনির।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী তার সৈন্যসহ মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্র বাহিনীর কাছে ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh